মনীষীদের জীবনী

ইমাম আহমদ রেযা খাঁন বেরেলভী (রহমাতুল্লাহি আলায়হি)

ইমাম আহমদ রেযা খাঁন বেরেলভী (রহমাতুল্লাহি আলায়হি)
═══ ✾✾✾ ═══ ✏ ইমরান বিন বদরী ≪
নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম আম্মা বা’দ।
✾ সবছে আওলা ওআলা হামারা নবী-সবছে বালা ওআলা হামারা নবী।
সম্মানিত বন্ধুরা,লিখার শুরতেই বলে রাখি আমাদের প্রত্যেকের উচিত একটু সহনশীল হওয়া।মুসলিম সমাজ আজ সহনশীল নয় বলে একে অন্যের বিরুদ্ধে অযাচিত লিখা লিখে যাচ্ছে।আক্রমনাত্মক লিখা যেন আমাদের সমাজে প্রতিনিয়ত লিখনি হয়ে দাড়িয়েছে।বিতর্ক নয়,আশাকরি প্রত্যেকে সম্মানের সহিত জানতে এবং জানাতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে এটাই যেন হয় আমাদের কাম্য।হিংসা-বিদ্বেষ নয় সহনশীলতাই কাম্য।হাদীস শরীফে এসেছে-হিংসা-বিদ্বেষ- সে ব্যক্তির নেক আমলসমূহ এমনিভাবে জ্বালিয়ে দেয়,যেমন আগুন শুকনো লাকড়িসমূহ জ্বালিয়ে দেয়।(আবু দাউদ শরীফ,২/৩১৬)
আজ লিখতে বসলাম এমন এক আশেকে রাসুলের সম্পর্কে যার লিখনিতে মুগ্ধ হয়ে অনেকি লিখেছেন উনার জীবনী।আমি ক্ষুদ্র জ্ঞানে লিখার যোগ্যতা না থাকলেও সাহস করে একটু করে লিখতে সতেষ্ট হলাম।
✾ সংক্ষিপ্ত পরিচয় ✾
══════════
ভারতীয় উপমহাদেশে সহনশীলতা ও অপরিসীম জ্ঞান এবং সব বিষয়ে দক্ষতা ও কর্ম নৈপুন্যের বিরল ইতিহাস যিনি সৃস্টি করেছিলেন তিনি হলেন আহমদ রেযা খাঁন বেরেলভী (রঃ) Ahmed Raza Khan Barelvi ( احمد رضاخان بریلوی)।
উনার পিতা মওলানা হাকীম শাহ্‌ নকী আলী খান। ইমাম আহমদ রেযা (রঃ) ভারতের উত্তর প্রদেশের বেরেলী শহরের হাবুলী/জাসুলী মহল্লায় ১০ই শাওয়াল ১২৭২ হিজরী এবং ১৪ই জুন ১৮৫৬ সালে জন্ম গ্রহণ করেন।যার ক্ষুরধার লেখনি নিরলস সংগ্রাম ও পরিশ্রম ক্বিয়ামত পযর্ন্ত সুন্নী মুসলমানদের অনুপ্রেরণা যোগাবে। বন্ধুরা,আলা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান ফাজেলে বেরেলভী (রহঃ) ছিলেন একজন শ্রদ্বেয় ও স্মরণীয় মহান ব্যক্তিত্ব।অনূর্ধ চৌদ্দ বছর বয়সে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ‘শেষ সনদ’ লাভ করেন। মাত্র ১৪ বছর বয়সেই আ’লা হযরত ফতওয়া প্রণয়ন সূচনা করেন। ‘আব্দুল মুছতফা’ উপনাম ব্যবহারকারী আহমদ রেযা খান বেরেলভী ‘আ‘লা হযরত’ নামেই অধিক পরিচিত। ১৮৭৭ সালে পিতার সাথে তিনি হজ্জব্রত পালনের জন্য মক্কায় গমন করেন। অতঃপর দেশে ফিরে লেখালেখিতে মনোনিবেশ করেন।আরবী, উর্দূ ও ফার্সী ভাষায় উনার রচিত মৌলিক ও অনুবাদ গ্রন্থ, কবিতাগ্রন্থ ইত্যাদির সংখ্যা ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ১৫০০ টি রচনা করেছেন।১৯১২ সালে উনার অনূদিত পবিত্র কুরআনের উর্দূ তরজমা (کنزالایمان) কুনূযূল ঈমান ফি তরজমাতিল কুরআন’ প্রকাশিত হয়। উনার প্রধান ও সর্ববৃহৎ রচনা হল ‘ফৎওয়া রেযভিয়াহ’ যা ২৭ খন্ডে রচিত ও প্রতিটি খন্ড ১০০০ পৃষ্ঠা বিশিষ্ট।পরে রেযা ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে এটি ৩০ খন্ডে প্রকাশিত হয়। যার পৃষ্ঠা সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯০,০০০। যার অধিকাংশ রচনাতেই রাসূল ﷺ প্রেমের বন্দনা প্রবল আকারে প্রকাশ পেয়েছে।ক্বাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণার দাবীতে তিনিই জোর তৎপরতা চালিয়ে ছিলেন।সর্বস্বীকৃত আ‘লা হযরত শাহ আহমদ রেযা খাঁন মুহাদ্দিসে বেরেলভী ছিলেন হানাফী মাযহাবের অনুসারী।মূলতঃ আ’লা হযরতের জন্মটাই ছিল এক নতুন শতাব্দির সূচনা।
✾ জ্ঞানের দক্ষতা ✾
═════════
১.ইলমে কোরআন, ২.ইলমে হাদিস,৩.ইলমে ফিকহ্‌, ৪.ইলমে মায়ানী,৫.ইলমে বয়ান,৬.ইলমে ফরাইজ, ৭.ইলমে তাফসীর,৮.ইলমে নাহাভ,৯.ইলমে ছরফ,১০,ইলমে মান্‌তিক্‌,১১.ইলমে আকাঈদ,১২.উসুলে হাদিস.১৩.উসুলে ফিকহ্‌ ইত্যাদি।
এ ছাড়া– ইলমে বালাগাত,আসমায়ে রেজাল (হাদিস বর্ণনাকারীদের জীবনি), দর্শন,জ্যামিতি,গণিত,ইতিহাস,বিষয়েও তিনি দক্ষ ছিলেন।ভাষাতত্ত্বে যেমন তিনি একজন উঁচু মানের ভাষাবিদ,সাহিত্যের ক্ষেত্রেও তিনি অদ্বিতীয় সাহিত্যিক।
✾ প্রসিদ্ধ কয়েকটি রচনাবলী✾
══════════════
*حدائقِ بخشش (Hadaiq e Bakhshish)
*احادیثِ شفاعت (Ahkam-e-Shariat)
*عرفان شریعت (Irfan-e-Shariat)
*تعریف پر انعام
*مطلع القمرین
*احادیثِ شفاعت
*حقيقت بيعت
*اذاقۃ الاثام لمانعي عمل المولد و القيام (Izaqa tul Asaam Limani Amal AlMaulid Wal Qiyam)
*مسائل معراج (Masail-e-Mairaaj)
*السنیة الانیقہ فی فتاوى أفريقة
*الهدایۃ المباركة في خلق الملائكۃ
* الإجازات المتينة لعلماء بكة والمدينة
*حسام الحرمين على منحر الكفر والمين
*هدي الحيران في نفي الفئ عن سيد الأكوان (Hudiyul Hairan Fi Nafi az Zill An Sayyidil Akwan)
*شمول الإسلام لأصول الرسول الكرام (Shumulul Islam li Usool ir Rasool il Kiram)
*الكلمة الملهمة في الحكمة المحكمة لوهاء الفلسفة المشئمة
*مقال العرفاء بإعزاز شرع وعلماء (Maqal ul Urafa bi Aizaz Sharyi wa Ulama)
*النور الرونق لإسفار الماء المطلق (An Noor wa Rawnaq li Isfari Maa al Mutlaq)
*أنفس الفكر في قربان البقر(Anfsaul Fikr fi Qurbanil Baqr)
✾ উনার সম্পর্কে মনীষীদের অভিমত✾
═══════════════════
আ’লা হযরত (রহঃ) সম্পর্কে ইয়াছিন আখতার মিছবাহী কৃত ‘দেবুস্থানে রেযা’ গ্রন্থে যে সকল মনীষী আ’লা হযরতের জ্ঞান-গরিমা ও শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে মতামত ব্যক্ত করেছেন।
(১) আশরাফ আলী থানবী বলেন- আমার আন্তরে আহমদ রেযা খাঁ (রহঃ) এর প্রতি অপরিসীম শ্রদ্বা রয়েছে।তিনি আমাদের কাফির বলেন ইশকে রাসূলের ভিত্তিতে।অন্য কোন উদ্দেশ্যে নয়।(আলা হযরত কা ফিকহী মকাম এর বরাতে, লাহোরে মুদ্রিত ১৯৭১ইং কৃত মাওলানা আখতার শাহজাহান পূরী)
তিনি অন্যত্র বলেন-তাঁর সাথে আমাদের বিরোধীতার কারণ বাস্তবিকপক্ষে হুব্বে রাসূল (রাসূল (দঃ) এর ভালবাসা)ই।তিনি আমাদেরকে হুজুর (দঃ)এর প্রতি অশালীনতা (বেয়াদবী) প্রদর্শনকারী মনে করেন।(আশরাফুস সাওযানিহ, ১ম খন্ড, পৃঃ নং- ১২৯)
অন্যত্র আরো বলেন-আমার যদি সুযোগ হতো, তাহলে আমি মৌলভী আহমদ রেযা খান বেরেলভী পেছনে নামাজ পড়ে নিতাম।(উসওয়া-ই-আকাবিরঃ পৃষ্ঠা নং-১৮)
(২) আবুল আ’লা মওদুদী বলেন-“মাওলানা আহমদ রেজা খানের জ্ঞানগরীমাকে আমি আন্তরিকভাবে শ্রদ্বা করি। তিনি বাধানাবলীর বিষয়ে অত্যন্ত উচু মানের ছিলেন। তাঁর এই শ্রেষ্ঠত্বের কথা ঐ সমস্ত লোককেও স্বীকার করতে হবে, যারা তাঁর সাথে বিরোধ রাখে”।(মাক্বালাতে ইয়াওমে রেযা ২য় খন্ড)
তিনি অন্যত্র বলেন-আমার দৃষ্টিতে মাওলানা আহমদ রেযা খান মরহুম ও মগফুর ধর্মীয় জ্ঞান ও গভীর অন্তদৃষ্টীর ধারক এবং মুসলমানদের একজন উচ্চ পর্যায়ের সম্মানযোগ্য ইমাম (মুক্বতদা) ছিলেন। যদিও তাঁর কোন কোন ফতোয়া ও মতামতের সাথে আমার বিরোধ রয়েছে, কিন্তু আমি তার দ্বীনি খেদমতের কথাও নিওর্দিধায় দ্বীকার করি। (ইমামে আহমদ রেযা আল মিজান সংখ্যা বোম্বাই ১৯৭৬ইং পৃঃ নং- ১১৬)
(৩) ডঃ স্যার জিয়াউদ্দীন (আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভি:সি:) যথার্থই মন্তব্য করেছেন,“নিজ দেশে আহমদ রেজার মতো এত বড় বিজ্ঞ পন্ডিত ব্যক্তিত্ব থাকা সত্ত্বেও শিক্ষার জন্য আমরা ইউরোপ গিয়ে দুঃখজনক ভাবে অযথা সময় নষ্ট করেছি”।
✾ মসলকে আ‘লা হযরত✾
════════════
‘মসলক’ শব্দের অর্থ- রাস্তা,নিয়মনীতি,পদ্ধতি প্রভৃতি।‘মসলকে আ‘লা হযরত’ মানে হল, আ‘লা হযরত শাহ ইমাম আহমদ রেযা খাঁন ফাযেলে বেরলভী (র:)-এর দেখানো রাস্তা, নিয়মনীতি, পদ্ধতি বা মতাদর্শ। অর্থাৎ, কুরান-সুন্নাহ’র আলোকে যে নিয়মনীতি, পদ্ধতি বা মতাদর্শ আ‘লা হযরত কিবলা প্রতিষ্ঠিত করে গিয়েছেন এরই নাম ‘মসলকে আ‘লা হযরত’।তা নতুন কোন মত-পথ নয়, বরং চৌদ্দশত বছর আগের রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর সুন্নাত এবং জামায়াতে সাহাবায়ে কিরাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম-এর আদর্শেরই নমুনা-বাস্তবতা।যে মসলকের মূল মন্ত্র ইশকে রাসূল; যা ঈমানের মূল এবং শরীয়তে মুস্তফা ﷺ-এর পূর্ণ পাবন্দী।এখানে না আছে অশ্লীল গান-বাজনা, খেল-তামাশা,আর না আছে হারাম কর্মকান্ড।
✾ ওফাত ✾
══════
ইমাম আহমদ রেযা খান বেরেলভী (রঃ) ২৫শে সফর ১৩৪০ হিজরী এবং ইংরেজী ২৭ শে সেপ্টেম্বর ১৯২১ সালে জুমার দিন ৬৫ বছর বয়সে তিনি ইহলোক থেকে পর্দা করেন।
(ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলায়হি রাজিউন)।ইয়া আল্লাহ্‌ ! আমাদের অন্তর নবী ﷺ এর ভালবাসায় পরিপূর্ণ করে দিন।আমীন।
(অনুরোধ করছি লেখাটিতে ভুল হলে আমাকে জানাতে ভুলবেন না প্লীজ)

No comments:

Post a Comment